চলে যাব- তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ....
এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান;
জীর্ণ পৃথিবীতে ব্যর্থ, মৃত আর ধ্বংসস্তূপ-পিঠে
চলে যেতে হবে আমাদের।
চলে যাব- তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ
প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল,
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
অবশেষে সব কাজ সেরে
আমার দেহের রক্তে নতুন শিশুকে
করে যাব আশীর্বাদ,
তারপর হব ইতিহাস।।
# সুকান্ত ভট্টাচার্য
জীর্ণ পৃথিবীতে ব্যর্থ, মৃত আর ধ্বংসস্তূপ-পিঠে
চলে যেতে হবে আমাদের।
চলে যাব- তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ
প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল,
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
অবশেষে সব কাজ সেরে
আমার দেহের রক্তে নতুন শিশুকে
করে যাব আশীর্বাদ,
তারপর হব ইতিহাস।।
# সুকান্ত ভট্টাচার্য
আমি চিরদূর্দম, দুর্বিনীত, নৃশংস,....
আমি চিরদূর্দম, দুর্বিনীত, নৃশংস,
মহা- প্রলয়ের আমি নটরাজ, আমি সাইক্লোন, আমি ধ্বংস!
আমি মহাভয়, আমি অভিশাপ পৃথ্বীর,
আমি দুর্বার,
আমি ভেঙে করি সব চুরমার!
আমি অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল,
আমি দ’লে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল!
আমি মানি না কো কোন আইন,
আমি ভরা-তরী করি ভরা-ডুবি, আমি টর্পেডো, আমি ভীম ভাসমান মাইন!
আমি ধূর্জটি, আমি এলোকেশে ঝড় অকাল-বৈশাখীর
আমি বিদ্রোহী, আমি বিদ্রোহী-সুত বিশ্ব-বিধাতৃর!
বল বীর -
চির-উন্নত মম শির!
# কাজী নজরুল ইসলাম
মহা- প্রলয়ের আমি নটরাজ, আমি সাইক্লোন, আমি ধ্বংস!
আমি মহাভয়, আমি অভিশাপ পৃথ্বীর,
আমি দুর্বার,
আমি ভেঙে করি সব চুরমার!
আমি অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল,
আমি দ’লে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল!
আমি মানি না কো কোন আইন,
আমি ভরা-তরী করি ভরা-ডুবি, আমি টর্পেডো, আমি ভীম ভাসমান মাইন!
আমি ধূর্জটি, আমি এলোকেশে ঝড় অকাল-বৈশাখীর
আমি বিদ্রোহী, আমি বিদ্রোহী-সুত বিশ্ব-বিধাতৃর!
বল বীর -
চির-উন্নত মম শির!
# কাজী নজরুল ইসলাম
খুঁজিব কি তারে —
কোনো এক অন্ধকারে আমি
যখন যাইব চলে — আরবার আসিব কি নামি
অনেক পিপাসা লয়ে এ মাটির তীরে
তোমাদের ভিড়ে!
কে আমারে ব্যথা দেছে — কে বা ভালোবাসে —
সব ভুলে, শুধু মোর দেহের তালাসে
শুধু মোর স্নায়ু শিরা রক্তের তরে
এ মাটির পরে
আসিব কি নেমে!
পথে পথে — থেমে — থেমে — থেমে
খুঁজিব কি তারে —
এখানের আলোয় আঁধারে
যেইজন বেঁধেছিল বাসা!
# জীবনানন্দ দাশ
কার্তিকের মিঠা রোদে আমাদের মুখ যাবে পুড়ে....
হাতে হাত ধরে ধরে গোল হয়ে ঘুরে ঘুরে ঘুরে
কার্তিকের মিঠা রোদে আমাদের মুখ যাবে পুড়ে;
ফলন্ত ধানের গন্ধে — রঙে তার — স্বাদে তার ভরে যাবে আমাদের সকলের দেহ;
রাগ কেহ করিবে না — আমাদের দেখে হিংসা করিবে না কেহ।
আমাদের অবসর বেশি নয — ভালোবাসা আহ্লাদের অলস সময়
আমাদের সকলের আগে শেষ হয়
দূরের নদীর মতো সুর তুলে অন্য এক ঘ্রাণ — অবসাদ –
আমাদের ডেকে লয় — তুলে লয় আমাদের ক্লান্ত মাথা — অবসন্ন হাত।
# জীবনানন্দ দাশ
আবার আসিয়ো তুমি, আসিবার ইচ্ছা যদি হয়!–
শেষবার তার সাথে যখন হয়েছে দেখা মাঠের উপরে
বলিলাম: ‘একদিন এমন সময়
আবার আসিয়ো তুমি, আসিবার ইচ্ছা যদি হয়!–
পঁচিশ বছর পরে!’
এই বলে ফিরে আমি আসিলাম ঘরে;
তারপর কতবার চাঁদ আর তারা,
মাঠে মাঠে মরে গেল, ইদুর — পেচাঁরা
জোছনায় ধানক্ষেতে খুঁজে
এল-গেল। –চোখ বুজে
কতবার ডানে আর বায়ে
পড়িল ঘুমায়ে
কত-কেউ! — রহিলাম জেগে
আমি একা — নক্ষত্র যে বেগে
ছুটিছে আকাশে
তার চেয়ে আগে চলে আসে
যদিও সময়–
পঁচিশ বছর তবু কই শেষ হয়!–
# জীবনানন্দ দাশ
দারুচিনি দ্বীপের পানে...
কান্নার সাত তারে সুর তুলি, আবার হাসবো বলে...
বেদনার অতলে ডুবে, তোমাকে আবারো ছুয়ে যাবার স্বপ্ন দেখি এখনো
বিকেলের মোম আলোয় তোমাকে দেখবো...
বাস্তব সংকচের মাথায় ঘোল ঢেলে দাড়াব পাশে তোমার...
জানি যদিও তুমি চাইছো ছুতে আমায়, বাহানার অভিনয়ে ধরবো ঐ হাত দুটি....
মুখমুখি বসতে চেয়েছিলে তুমি, কিন্তু হাটবো আমি...তোমায় পাশে নিয়ে
দিগন্তের পথে...
দারুচিনি দ্বীপের পানে...
তুমি ফুটে আছো এক নিষ্পাপ বিশুদ্ধ পদ্ম...
আমাকে ভালোবাসার পর আর কিছুই আগের মতো থাকবে না তোমার।
নিজেকে দুরারোগ্য ব্যধিগ্রস্থ- মনে হবে যেনো তুমি শতাব্দীর পর শতাব্দী
শুয়ে আছো হাসপাতালে। পর মুহূর্তেই মনে হবে যেনো
মানুষের ইতিহাসে একমাএ তুমিই সুস্থ, অন্যরা ভীষণ অসুস্থ।
শহর আর সভ্যতার ময়লা স্রোত ভেঙে তুমি যখন চৌরাস্তায় এসে
ধরবে আমার হাত, তখন তোমার মনে হবে এ শহর আর বিংশ শতাব্দীর
জীবন ও সভ্যতার নোংরা পানিতে একটি নীলিমা ছোঁয়া মৃণালের শীর্ষে
তুমি ফুটে আছো এক নিষ্পাপ বিশুদ্ধ পদ্ম
পবিত্র অজর।
# হুমায়ুন আজাদ
আর কিছুই আগের মতো থাকবে না তোমার...
আমাকে ভালোবাসার পর আর কিছুই আগের মতো থাকবে না তোমার।
রাস্তায় নেমেই দেখবে বিপরীত দিক থেকে আসা প্রতিটি রিকশায়
ছুটে আসছি আমি আর তোমাকে পেরিয়ে চ’লে যাচ্ছি
এদিকে-সেদিকে। তখন তোমার রক্তে আর কালো চশমায় এতো অন্ধকার
যেনো তুমি ওই চোখে কোনোদিন কিছুই দ্যাখো নি।
# হুমায়ুন আজাদ
কোনোদিন দেখিব না তারে আমি
কোনোদিন দেখিব না তারে আমি: হেমন্তে পাকিবে ধান, আষাঢ়ের রাতে
কালো মেঘ নিঙড়ায়ে সবুজ বাঁশের বন গেয়ে যাবে উচ্ছ্বাসের গান
সারারাত, — তবু আমি সাপচরা অন্ধ পথে — বেনুবনে তাহার সন্ধান
পাবো নাকে: পুকুরের পাড়ে সে যে আসিবে না কোনোদিন হাঁসিনীর সাথে,
সে কোনো জ্যোৎস্নায় আর আসিবে না — আসিবে না কখনো প্রভাতে,
যখন দুপুরে রোদে অপরাজিতার মুখ হয়ে থাকে ম্লান,
যখন মেঘের রঙে পথহারা দাঁড়কাক পেয়ে গেছে ঘরের সন্ধান,
ধূসর সন্ধ্যায় সেই আসিবে না সে এখানে;....
# জীবনানন্দ দাশ
দু'জন
আমাকে খোজো না তুমি বহুদিন-কতদিন আমিও তোমাকে
খুজি নাকো; এক নক্ষত্রের নিচে তবু-একই আলো পৃথিবীর পারে
আমরা দুজনে আছি; পৃথিবীর পুরনো পথের রেখা হয়ে যায় ক্ষয়,
প্রেম ধীরে মুছে যায় নক্ষত্রেরও একদিন মরে যেতে হয়,
হয় নাকি? বলে সে তাকাল তার সঙ্গিনীর দিকে;
আজ এই মাঠ সূর্য সহমর্মী অঘ্রাণ কার্তিকে
প্রাণ তার ভরে গেছে।
দুজনে আজকে তারা চিরস্থায়ী পৃথিবীর ও আকাশের পাশে
আবার প্রথম এল-মনে হয় যেন কিছু চেয়ে-কিছু একান্ত বিশ্বাসে।
লালচে হলদে পাতা অনুষঙ্গে জাম বট অশ্বত্থের শাখার ভিতরে
অন্ধকারে নড়ে চড়ে ঘাসের উপর ঝরে পড়ে;
তারপর সান্ত্বনায় থাকে চিরকাল;
যেখানে আকাশে খুব নীরবতা শান্তি খুব আছে,
হৃদয়ে প্রেমের গল্প শেষ হলে ক্রমে ক্রমে যেখানে মানুষ
আশ্বাস খুঁজেছে এসে সময়ের দায়ভাগী নক্ষত্রের মানুষ
আশ্বাস খুঁজেছে এসে সময়ের দায়ভাগী নক্ষত্রের কাছে:
সেই ব্যাপ্ত প্রান্তরে দুজন; চারি দিকে ঝাউ আম নিম নাগেশ্বরে
হেমন্ত আসিয়া গেছে; চিলের সোনালি ডানা হয়েছে খয়েরি;
ঘুঘুর পালক যেন ঝরে গেছে- শালিকের সেই আর দেরি,
হলুদ কঠিন ঠ্যাং উঁচু করে ঘুমাবে সে শিশিরের জলে;
ঝরিছে মরিছে সব এই খানে বিদায় নিতেছে ব্যাপ্ত নিয়মের ফলে।
নারী তার সঙ্গীকে : ‘পৃথিবীর পুরনো পথের রেখা হয়ে যায় ক্ষয়,
জানি আমি; — তারপর আমাদের দুঃস্থ হৃদয়
কী নিয়ে থাকিবে বল; — একদিন হৃদয়ে আঘাত ঢের দিয়েছে চেতনা,
তারপর ঝরে গেছে আজ তবু মনে হয় যদি ঝরিত না
হৃদয়ে প্রেমের শীর্ষ আমাদের — প্রেমের অপূর্ব শিশু আরক্ত বাসনা
ফুরত না যদি, আহা, আমাদের হৃদয়ের থেকে–’
এই বলে ম্রিয়মাণ আঁচলের সর্বস্বতা দিয়ে মুখ ঢেকে
উদ্বেল কাশের বনে দাঁড়িয়ে রইল হাঁটুভর।
হলুদরঙের শাড়ি, চোরকাঁটা বিঁধে আছ, এলোমেলো অঘ্রাণের খড়
চারি দিকে শূন্য থেকে ভেসে এসে ছুঁয়ে ছেনে যেতেছে শরীর;
চুলের উপর তার কুয়াশা রেখেছে হাত, ঝরিছে শিশির;–
প্রেমিকের মনে হল : ‘এই নারী-অপরূপ-খুঁজে পাবে নক্ষত্রের তীরে
যেখানে রব না আমি, রবে না মাধুরী এই, রবে না হতাশা,
কুয়াশা রবে না আর — জনিত বাসনা নিজে — বাসনার মতো ভালোবাসা
খুঁজে নেবে অমৃতের হরিণীর ভিড় থেকে ইপ্সিতেরে তার।’
# জীবনানন্দ দাশ
নিমন্ত্রণ
তুমি যাবে ভাই - যাবে মোর সাথে, আমাদের ছোট গাঁয়,
গাছের ছায়ায় লতায় পাতায় উদাসী বনের বায়;
.........মায়া মমতায় জড়াজড়ি করি
.........মোর গেহখানি রহিয়াছে ভরি,
মায়ের বুকেতে, বোনের আদরে, ভাইয়ের স্নেহের ছায়,
তুমি যাবে ভাই - যাবে মোর সাথে, আমাদের ছোট গাঁয়,
ছোট গাঁওখানি- ছোট নদী চলে, তারি একপাশ দিয়া,
কালো জল তার মাজিয়াছে কেবা কাকের চক্ষু নিয়া;
.........ঘাটের কিনারে আছে বাঁধা তরী
.........পারের খবর টানাটানি করি;
বিনাসুতি মালা গাথিছে নিতুই এপার ওপার দিয়া;
বাঁকা ফাঁদ পেতে টানিয়া আনিছে দুইটি তটের হিয়া।
তুমি যাবে ভাই- যাবে মোর সাথে, ছোট সে কাজল গাঁয়,
গলাগলি ধরি কলা বন; যেন ঘিরিয়া রয়েছে তায়।
.........সরু পথ খানি সুতায় বাঁধিয়া
.........দূর পথিকেরে আনিছে টানিয়া,
বনের হাওয়ায়, গাছের ছায়ায়, ধরিয়া রাখিবে তায়,
বুকখানি তার ভরে দেবে বুঝি, মায়া আর মমতায়!
তুমি যাবে ভাই যাবে মোর সাথে - নরম ঘাসের পাতে
চম্বন রাখি অধরখানিতে মেজে লয়ো নিরালাতে।
.........তেলাকুচা - লতা গলায় পরিয়া
.........মেঠো ফুলে নিও আঁচল ভরিয়া,
হেথায় সেথায় ভাব করো তুমি বুনো পাখিদের সাথে,
তোমার গায়ের রংখানি তুমি দেখিবে তাদের পাতে।
তুমি যদি যাও আমাদের গাঁয়ে, তোমারে সঙ্গে করি
নদীর ওপারে চলে যাই তবে লইয়া ঘাটের তরী।
.........মাঠের যত না রাখাল ডাকিয়া
.........তোর সনে দেই মিতালী করিয়া
ঢেলা কুড়িইয়া গড়ি ইমারত সারা দিনমান ধরি,
সত্যিকারের নগর ভুলিয়া নকল নগর গড়ি।
তুমি যদি যাও - দেখিবে সেখানে মটর লতার সনে,
সীম আর সীম - হাত বাড়াইলে মুঠি ভরে সেই খানে।
.........তুমি যদি যাও সে - সব কুড়ায়ে
.........নাড়ার আগুনে পোড়ায়ে পোড়ায়ে,
খাব আর যত গেঁঢো - চাষীদের ডাকিয়া নিমন্ত্রণে,
হাসিয়া হাসিয়া মুঠি মুঠি তাহা বিলাইব দুইজনে।
তুমি যদি যাও - শালুক কুড়ায়ে, খুব - খুব বড় করে,
এমন একটি গাঁথিব মালা যা দেখনি কাহারো করে,
.........কারেও দেব না, তুমি যদি চাও
.........আচ্ছা না হয় দিয়ে দেব তাও,
মালাটিরে তুমি রাখিও কিন্তু শক্ত করিয়া ধরে,
ও পাড়াব সব দুষ্ট ছেলেরা নিতে পারে জোর করে;
সন্ধ্যা হইলে ঘরে ফিরে যাব, মা যদি বকিতে চায়,
মতলব কিছু আঁটির যাহাতে খুশী তারে করা যায়!
.........লাল আলোয়ানে ঘুঁটে কুড়াইয়া
.........বেঁধে নিয়ে যাব মাথায় করিয়া
এত ঘুষ পেয়ে যদি বা তাহার মন না উঠিতে চায়,
বলিব - কালিকে মটরের শাক এনে দেব বহু তায়।
খুব ভোর ক’রে উঠিতে হইবে, সূয্যি উঠারও আগে,
কারেও ক’বি না, দেখিস্ পায়ের শব্দে কেহ না জাগে
.........রেল সড়কের ছোট খাদ ভরে
.........ডানকিনে মাছ কিলবিল করে;
কাদার বাঁধন গাঁথি মাঝামাঝি জল সেঁচে আগে ভাগে
সব মাছগুলো কুড়ায়ে আনিব কাহারো জানার আগে।
ভর দুপুরেতে এক রাশ কাঁদা আর এক রাশ মাছ,
কাপড়ে জড়ায়ে ফিরিয়া আসিব আপন বাড়ির কাছ।
.........ওরে মুখ - পোড়া ওরে রে বাঁদর।
.........গালি - ভরা মার অমনি আদর,
কতদিন আমি শুনি নারে ভাই আমার মায়ের পাছ;
যাবি তুই ভাই, আমাদের গাঁয়ে যেথা ঘন কালো গাছ।
যাবি তুই ভাই, যাবি মোর সাথে আমাদের ছোট গাঁয়।
ঘন কালো বন - মায়া মমতায় বেঁধেছে বনের বায়।
.........গাছের ছায়ায় বনের লতায়
.........মোর শিশুকাল লুকায়েছে হায়!
আজি সে - সব সরায়ে সরায়ে খুজিয়া লইব তায়,
যাবি তুই ভাই, যাবি মোর সাথে আমাদের ছোট গায়।
তোরে নিয়ে যাব আমাদের গাঁয়ে ঘন-পল্লব তলে
লুকায়ে থাকিস্, খুজে যেন কেহ পায় না কোনই বলে।
.........মেঠো কোন ফুল কুড়াইতে যেয়ে,
.........হারাইয়া যাস্ পথ নাহি পেয়ে;
অলস দেহটি মাটিতে বিছায়ে ঘুমাস সন্ধ্যা হলে,
সারা গাঁও আমি খুজিয়া ফিরিব তোরি নাম বলে বলে।
# জসীমউদ্দিন
আর একদিন আসিও বন্ধু
তোমারে আমার লেগেছিল ভাল আর সব ভাল তাই
আমার জীবনে এতটুকু দাগ কেহ কভু ফেলে নাই
তুমি দিয়েছিলে ক্ষুধা
অবহেলে তাই ছাড়িয়া এসেছি জগতের যত সুধা
এ জিবনে মোর এই গৌরব,তোমারে যে পাই নাই
আর কার কাছে না-পাওয়ার ব্যাথা সহিতে হয়নি তাই।
তাই আজ শুভ-ক্ষনে
মোর প্রতি যত অন্যায় আনিওনা কভু মনে
আমারে যে ব্যাথা দিয়েছিলে তাতে নাহি মোরে দুখ
তুমি সুখে ছিলে মোর সাথে র'বে সেই স্মরনের সুখ।।
# জসিম উদ্দীন ("আর একদিন আসিও বন্ধু" কবিতার একাংশ)
collected from jibanondo das books
অথচ বৃষ্টি বহুদিন থেকে পলাতক......
একেকটা সময় আসে, যখন কারো কারো কাছে
নতজানু হওয়া যায় অসংকোচে
সে মানুষ হোক, বৃক্ষ হোক, কী পাথর
একেকটা সময় আসে, যখন নতজানু হতে হয় অসংকোচে
তখন কোন মানুষ নয়, বৃক্ষ নয়, পাথরও নয়
শুধু এককোনা বৃষ্টি, বৃষ্টির জন্য সুগন্ধ কস্তুরির কাছে
দয়াপ্রার্থী আমি
হাঁটুমুড়ে যুক্ত করকমলে বসে আছি বৃষ্টির জন্য
অথচ বৃষ্টি বহুদিন থেকে পলাতক......
দেখা হয়ে যাবে তোমার আমার
দেখা হবে
দেখা হয়ে যাবে ধর্মঘটের আন্দোলনের এই শহরে আবার
দেখা হয়ে যাবে তোমার আমার
দেখা হবে বার বার।
অভিশাপ
যেদিন আমি হারিয়ে যাব, বুঝবে সেদিন বুঝবে,
অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় আমার খবর পুছবে-
......................বুঝবে সেদিন বুঝবে!
..................ছবি আমার বুকে বেঁধে
..................পাগল হ’লে কেঁদে কেঁদে
..................ফিরবে মর” কানন গিরি,
..................সাগর আকাশ বাতাস চিরি’
..................যেদিন আমায় খুঁজবে-
......................বুঝবে সেদিন বুঝবে!
স্বপন ভেঙে নিশুত্ রাতে জাগবে হঠাৎ চমকে,
কাহার যেন চেনা-ছোঁওয়ায় উঠবে ও-বুকে ছমকে,-
......................জাগবে হঠাৎ চমকে!
..................ভাববে বুঝি আমিই এসে
..................ব’সনু বুকের কোলটি ঘেঁষে,
..................ধরতে গিয়ে দেখবে যখন
..................শূন্য শয্যা! মিথ্যা স্বপন!
..................বেদ্নাতে চোখ বুঁজবে-
......................বুঝবে সেদিন বুজবে।
গাইতে ব’সে কন্ঠ ছিঁড়ে আস্বে যখন কান্না,
ব’লবে সবাই-“ সেই য পথিক তার শেখানো গান না?’’
......................আস্বে ভেঙে কান্না!
..................প’ড়বে মনে আমার সোহাগ,
..................কন্ঠে তোমার কাঁদবে বেহাগ!
..................প’ড়বে মনে অনেক ফাঁকি
..................অশ্র”-হারা কঠিন আঁখি
..................ঘন ঘন মুছবে-
......................বুঝ্বে সেদিন বুঝবে!
আবার যেদিন শিউলি ফুটে ভ’রবে তোমার অঙ্গন,
তুলতে সে ফুল গাঁথতে মালা কাঁপবে তোমার কঙ্কণ-
......................কাঁদবে কুটীর-অঙ্গন!
..................শিউলি ঢাকা মোর সমাধি
..................প’ড়বে মনে, উঠবে কাঁদি’!
..................বুকের মালা ক’রবে জ্বালা
..................চোখের জলে সেদিন বালা
..................মুখের হাসি ঘুচবে-
......................বুঝবে সেদিন বুঝবে!
আসবে আবার আশিন-হাওয়া, শিশির-ছেঁচা রাত্রি,
থাকবে সবাই - থাকবে না এই মরণ-পথের যাত্রী!
......................আসবে শিশির-রাত্রি!
..................থাকবে পাশে বন্ধু স্বজন,
..................থাকবে রাতে বাহুর বাঁধন,
..................বঁধুর বুকের পরশনে
..................আমার পরশ আনবে মনে-
..................বিষিয়ে ও-বুক উঠবে-
......................বুঝবে সেদিন বুঝবে!
আসবে আবার শীতের রাতি, আসবে না ক আ সে-
তোমার সুখে প’ড়ত বাধা থাকলে যে-জন পার্শ্বে,
......................আসবে না ক’ আর সে!
..................প’ড়বে মনে, মোর বাহুতে
..................মাথা থুয়ে যে-দিন শুতে,
..................মুখ ফিরিয়ে থাকতে ঘৃণায়!
..................সেই স্মৃতি তো ঐ বিছানায়
..................কাঁটা হ’য়ে ফুটবে-
......................বুঝবে সেদিন বুঝবে!
আবার গাঙে আসবে জোয়ার, দুলবে তরী রঙ্গে,
সেই তরীতে হয়ত কেহ থাকবে তোমার সঙ্গে-
......................দুলবে তরী রঙ্গে,
..................প’ড়বে মনে সে কোন্ রাতে
..................এক তরীতে ছিলেম সাথে,
..................এমনি গাঙ ছিল জোয়ার,
..................নদীর দু’ধার এমনি আঁধার
..................তেম্নি তরী ছুটবে-
......................বুঝবে সেদিন বুঝবে!
তোমার সখার আসবে যেদিন এমনি কারা-বন্ধ,
আমার মতন কেঁদে কেঁদে হয়ত হবে অন্ধ-
......................সখার কারা-বন্ধ!
..................বন্ধু তোমার হান্বে হেলা
..................ভাঙবে তোমার সুখের মেলা;
..................দীর্ঘ বেলা কাটবে না আর,
..................বইতে প্রাণের শান- এ ভার
..................মরণ-সনে বুঝ্বে-
......................বুঝবে সেদিন বুঝ্বে!
ফুট্বে আবার দোলন চাঁপা চৈতী-রাতের চাঁদনী,
আকাশ-ছাওয়া তারায় তারায় বাজবে আমার কাঁদ্নী-
......................চৈতী-রাতের চাঁদ্নী।
..................ঋতুর পরে ফির্বে ঋতু,
..................সেদিন-হে মোর সোহাগ-ভীতু!
..................চাইবে কেঁদে নীল নভো গা’য়,
..................আমার মতন চোখ ভ’রে চায়
..................যে-তারা তা’য় খুঁজবে-
......................বুঝ্বে সেদিন বুঝ্বে!
আস্বে ঝড়, নাচবে তুফান, টুটবে সকল বন্ধন,
কাঁপবে কুটীর সেদিন ত্রাসে, জাগবে বুকে ক্রন্দন-
......................টুটবে যবে বন্ধন!
..................পড়বে মনে, নেই সে সাথে
..................বাঁধবে বুকে দুঃখ-রাতে-
..................আপনি গালে যাচবে চুমা,
..................চাইবে আদর, মাগ্বে ছোঁওয়া,
..................আপনি যেচে চুমবে-
......................বুঝবে সেদিন বুঝবে।
আমার বুকের যে কাঁটা-ঘা তোমায় ব্যথা হান্ত,
সেই আঘাতই যাচবে আবার হয়ত হ’য়ে শ্রান–
......................আসবে তখন পান’।
..................হয়ত তখন আমার কোলে
..................সোহাগ-লোভে প’ড়বে ঢ’লে,
..................আপনি সেদিন সেধে কেঁদে
..................চাপ্বে বুকে বাহু বেঁধে,
..................চরণ চুমে পূজবে-
......................বুঝবে সেদিন বুঝবে!
# কাজী নজরুল ইসলাম
তোমরা যেখানে সাধ চলে যাও...
তোমরা যেখানে সাধ চলে যাও — আমি এই বাংলার পারে
র’য়ে যাব; দেখিব কাঁঠালপাতা ঝরিতেছে ভোরের বাতাসে;
দেখিব খয়েরি ডানা শালিখের সন্ধ্যায় হিম হয়ে আসে
ধবল রোমের নিচে তাহার হলুদ ঠ্যাং ঘাসে অন্ধকারে
নেচে চলে-একবার — দুইবার — তারপর হঠাৎ তাহারে
বনের হিজল গাছ ডাক দিয়ে নিয়ে হৃদয়ের পাশে;
দেখিব মেয়েলি হাত সকরুণ — শাদা শাঁখা ধূসর বাতাসে
শঙ্খের মতো কাঁদে: সন্ধ্যায় দাঁড়ালে সে পুকুরের ধারে,
খইরঙা হাঁসটিরে নিয়ে যাবে যেন কোন্ কাহিনীর দেশে –
‘পরণ-কথা’র গন্ধ লেগে আছে যেন তার নরম শরীরে,
কল্মীদামের থেকে জন্মেছে সে যেন এই পুকুরের নীরে –
নীরবে পা ধোয় জলে একবার — তারপর দূরে নিরুদ্দেশে
চ’লে যায় কুয়াশায় — তবু জানি কোনোদিন পৃথিবীর ভিড়ে
হারাব না তারে আমি — সে যে আছে আমার এ বাংলার তীরে।
# জীবনানন্দ দাশ
বৃষ্টি বহুদিন থেকে পলাতক......
একেকটা সময় আসে, যখন কারো কারো কাছে
নতজানু হওয়া যায় অসংকোচে
সে মানুষ হোক, বৃক্ষ হোক, কী পাথর
একেকটা সময় আসে, যখন নতজানু হতে হয় অসংকোচে
তখন কোন মানুষ নয়, বৃক্ষ নয়, পাথরও নয়
শুধু এককোনা বৃষ্টি, বৃষ্টির জন্য সুগন্ধ কস্তুরির কাছে
.................................দয়াপ্রার্থী আমি
হাঁটুমুড়ে যুক্ত করকমলে বসে আছি বৃষ্টির জন্য
অথচ বৃষ্টি বহুদিন থেকে পলাতক......
Boss, Collection-ta amar blog theke neowa mone hosse. jai-hok, aMar blog'er(harisur.blogspot.com) post apNar pochondo hoyese, tai THANKS....
ReplyDelete